গণ কবরস্থানের জন্য জায়গা দান করার ফজিলত

ইসলামে মৃত ব্যক্তিকে দাফনের ব্যাপারে গণকবরস্থানের ব্যবহারই সুন্নাহ ৷ ব্যাক্তিগত বা পারিবারিক কবরস্থান নয় ৷ সাহাবায়ে কেরাম এবং সলফে সালেহীনদের গণ কবরস্থানেই দাফন দেয়া হতো ৷ তখন পারিবারিক গোরস্থানের ধারণা ছিলো না ৷

বর্তমান সময়েও বিভিন্ন জায়গায় গণ কবরস্থান রয়েছে ৷ যেখানে সবাইকে দাফন করা হচ্ছে ৷ পারিবারিক গোরস্থানে দাফন করলে মূলত উত্তরাধীকারীদের হক নষ্ট হয় ৷ একান্ত অপারগ না হলে গণ কবরস্থানেই মৃত ব্যক্তিকে দাফন করা দরকার ৷

এতে করে অনেক ফায়দা রয়েছে ৷ যে কেউ যখন কবর জিয়ারত করবে ৷ দুআ করবে ৷ সেখানে কবরস্থ হওয়ায় সেও সওয়াবের ভাগিদার হবে ৷

গণকবরস্থানের জন্য জায়গা দান করার ফজিলত

এক হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত জাবের রাযিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, উহুদ যুদ্ধের দিন আমার ফুফু আমার পিতাকে দাফন করার জন্য নিজেদের কবরস্থানে নিয়ে আসেন। তখন হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পক্ষ থেকে এক ঘোষণাকারী ঘোষণা করলেন, তোমরা শহীদদেরকে যুদ্ধক্ষেত্রে ফেরত নিয়ে আস।

-জামে তিরমিজি : ১৭১৭

এ হাদীসে আলাদা দাফনের পরিবর্তে সবাই যেখানে দাফন হয়েছে, সেখানে দাফনের ব্যাপারে উৎসাহিত করা হয়েছে ৷

তবে দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, প্রচলিত সমাজ ব্যবস্থায় গণ কবরস্থান পাওয়া দুস্কর হয়ে দাঁড়িয়েছে ৷ খুব একটা নাই বললেই চলে ৷ দশ গ্রাম ঘুরে একটা পাওয়া যায় কিনা সন্দেহ! সেজন্য মানুষ পারিবারিক জায়গাতেই দাফন করতে বাধ্য হচ্ছে ৷

আরো পড়ুন – জানাযা নামাজের নিয়ম

সমাজের ধনাঢ্য ব্যক্তিদের সমাজকল্যাণমূলক এ কাজে এগিয়ে আসা উচিত ৷ মৃত ব্যক্তিদের কবর দেওয়ার জন্য জায়গা দান করা নিঃসন্দেহে সওয়াবের কাজ। আশা করা যায়, এতে সদকায়ে জারিয়ার সওয়াব হবে। কারণ এটি একটি জনকল্যাণমূলক কাজ। আর জমিন একটি স্থায়ী জিনিস।

সুতরাং আল্লাহ যদি চান তাহলে মানুষ এখান থেকে দীর্ঘদিন উপকৃত হবে। বিধায় দানকারীও স্থায়ীভাবে সওয়াব পেতে থাকবে ইনশাআল্লাহ।
তবে এ ব্যাপারে আলাদা কোন হাদীস বর্ণিত হয়েছে বলে আমার জানা নেই। যেহেতু জনসাধারণের উপকার জড়িত, তাই সাদকায়ে জারিয়া হওয়াটাই যুক্তিযুক্ত ৷

 

গনকবরস্থানে কবর দেওয়া সম্পর্কে হাদিসঃ

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: ” إِذَا مَاتَ الْإِنْسَانُ انْقَطَعَ عَنْهُ عَمَلُهُ إِلَّا مِنْ ثَلَاثَةٍ: إِلَّا مِنْ صَدَقَةٍ جَارِيَةٍ، أَوْ عِلْمٍ يُنْتَفَعُ بِهِ، أَوْ وَلَدٍ صَالِحٍ يَدْعُو لَهُ

হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যখন ব্যক্তি মারা যায়, তখন তার আমলের পথ রুদ্ধ হয়ে যায়। তবে তিনটি আমল বন্ধ হয় না। এক হল, সদকায়ে জারিয়া, দুই হল, ঐ ইলম যা দ্বারা অন্যরা উপকৃত হয়, তৃতীয় হল, নেক সন্তান যে, তার জন্য দুআ করে। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-১৬৩১, সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-২৮৮০]

এ হাদীস থেকে আমরা বুঝতে পারি যে, মৃত্যু এমন এক কঠিন জগত। যেখানে যাবার পর আর কোন আমলের সুযোগ নেই। সুযোগ নেই, নেই ভুলগুলো শুধরে এবং আমল বাড়িয়ে হাশরের ময়দানে মুক্তির ব্যবস্থা করা।

মৃত্যুর পর যে তিনটি আমল কাজে আসে

কিন্তু তিনটি পদ্ধতি দ্বারা মৃত্যুর পরও আমল জারী থাকে। অর্থাৎ কবরে বসে থেকেও আমলের সওয়াব পাওয়া যায়। কিয়ামত পর্যন্ত আমল করলে যত সওয়াব হবে, কিছু কাজের দ্বারা সেই সওয়াবের অধিকারী হওয়া যায়।

এর মাঝে একটি হল, সদকায়ে জারিয়া আরেকটি হল ইলমী কাজ রেখে যাওয়া। আর নেক সন্তান থাকা ৷

কোন ব্যক্তির মাধ্যমে উপরোক্ত কাজ হওয়া মানে উক্ত ব্যক্তি কিয়ামত পর্যন্তের জন্য সওয়াবের রাস্তা খুলে দিলো। এটা কেবলি ভাগ্যবান ব্যক্তিদের নসীবেই জুটবে এটাই স্বাভাবিক। পয়সা থাকলেই, সুযোগ থাকলেই সকলের জন্য এত বড় নিয়ামত অর্জনের তৌফিক হবে না।

মাদরাসা, মসজিদে জায়গা দেয়া, মাদরাসা মসজিদে অনুদান দেয়া, কিতাব প্রদান করা, জনকল্যাণমূলক কাজ করা এটা অনেক বড় সদকায়ে জারিয়া। এ মহান পূণ্যকাজের তৌফিক কেবল ভাগ্যবানদের নসীবেই জুটে থাকে।

জন সাধারণের উপকারের জন্য গণকবরস্থান তৈরীতে জমি বা অর্থ দান করাটাও অতীব গুরুত্বপূর্ণ একটি আমল ৷ সমাজের ধণাঢ্যশ্রেণি ও বিত্তবানদের এগিয়ে আসা উচিত ৷ আল্লাহ রব্বুল আলামীন আমাদের চমৎকার এ সাদকায়ে জারিয়ার কাজে অংশ নেয়ার তাওফিক দান করুন ৷ আমীন ৷

 

হাফেজ মাওলানা দীদার মাহদী
ভাইস প্রিন্সিপ্যাল
দারুলহুদা মডেল মাদরাসা
কোদালপুর, গোসাইরহাট, শরীয়তপুর ৷