তারাবীহ নামাজের নিয়ম ও রাকাত সংখ্যা দলীলসহ মাওলানা শরিফ আহমাদ

তারাবীহ নামাজের নিয়ম নিয়ত, মুনাজাত ও তারাবী নামাজ কত রাকাত?

 

সুপ্রিয় পাঠক । আসসালামুআলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহ । আশা করছি সবাই ভালো আছেন । আপনারা ভালো থাকুন এই দুআ করি সব সময় । এবার আসি মূল পয়েন্টে ।‌ আজ আপনাদের সাথে শেয়ার করতে যাচ্ছি তারাবীর নামাজ আদায়ের নিয়ত ,নিয়ম , মুনাজাত ও‌ রাকাত সংক্রান্ত জরুরী আলোচনা ।‌

 

পুরো কলামটি পড়ার আমন্ত্রণ রইল । উপকৃত হবেন ইনশাআল্লাহ ।

 

তারাবীহ শব্দের অর্থ কি ?

 

তারাবীহ একটি আরবী শব্দ । এটি বহুবচন । এই শব্দটির একবচন হলো তারবীহাতুন । শব্দটির অর্থ হলো‌ বসা , স্বস্তি, বিশ্রাম ও আরাম ইত্যাদি ।

ইসলামী পরিভাষায় রমজান মাসে ইশার নামাজের পর দুই রাকাত করে অতিরিক্ত যে নামাজ পড়া হয় তাকে সালাতুত তারাবীহ বা তারাবীর নামাজ বলে ।

 

এই নামাজ কিয়ামুল লাইল নামেও পরিচিত ।

 

তারাবীর নামাজের ওয়াক্ত

 

ইশার ফরজ ও সুন্নাত নামায আদায়ের পর তারাবীর নামাজের ওয়াক্ত শুরু হয় । অতঃপর সুবহে সাদেকের পূর্ব পর্যন্ত সময় বাকি থাকে ।‌ অর্থাৎ ইশার নামাজ যতক্ষণ পড়া যায় তারাবীর নামাজ ততক্ষণ পড়া যায়

। তবে ইশার সাথে আদায় করা উত্তম ।

 

তারাবীর নামাজের  নিয়ত আরবী

 

তারাবীর নামাজের আরবি নিয়ত সংক্ষেপে এভাবে করা যায়-

نويت ان اصلي لله تعالى ركعتين صلاه التراويح .(١)

আবার এভাবে ও করা যায়-

نويت ان اصلى لله تعالى ركعتى صلوة التراويح سنة رسول الله تعالى متوجها الى جهة الكعبة الشريفة الله اكب. (٢)

 

তারাবী নামাজের নিয়ত বাংলা উচ্চারণ:

 

( ১)নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তাআলা রাকআতিত তারাবীহ ।

(২) নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তা’আলা রাক’আতাই সালাতিল তারাবীহ সুন্নাতু রাসূলুল্লাহ তাআলা মুতাওজ্জিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শরীফাতি আল্লাহু আকবার।

 

তারাবীর নামাজের বাংলা নিয়ত

 

আমি দুই রাকাত তারাবীর নামাজ এই ইমামের পিছনে আদায় করছি আল্লাহু আকবার । একাকি নামাজ পড়লে এভাবে নিয়ত করবেন- আমি দুই রাকাত তারাবীর নামায পড়ছি আল্লাহু আকবার ।

 

তারাবীর নামাজ পড়ার নিয়ম

 

তারাবির নামাজ সুন্নাত । তাই সাধারণ অন্যান্য সুন্নাতের ন্যায় এই নামাজ পড়তে হয় ।‌ যে কোন সূরা দিয়ে পড়া যায় । তবে পুরো রমজানে তারাবীর নামাজে কোরআন খতম করা উত্তম ।

 

তারাবীর নামাজের দোয়া পড়ার হুকুম

 

তারাবীর নামাজে প্রতি চার রাকাত পর পর কিছু সময় বিশ্রাম করা মুস্তাহাব । তবে জামায়াতের লোকদের কষ্ট হলে কিংবা তারা এত সময় থাকতে না চাইলে দীর্ঘ সময় বিশ্রাম করার প্রয়োজন নেই । তাছাড়া এই বিশ্রামের সময় চুপ থাকা যায়। তাসবী তাহলীল করা যায়। দোয়া দরুদ পড়া ও কোরআন তেলাওয়াত করা কিংবা নফল নামাজ পড়া সবই জায়েজ ।

দোয়ার মধ্যে- سبحان الله وبحمده سبحان الله العظيم

( সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি সুবহানাল্লাহিল আযীম )

অথবা سبحان الله والحمد لله ولا اله الا الله والله اكبر

(সুবহানাল্লাহি ওয়াল হামদুলিল্লাহি ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার ) পাঠ করা উত্তম ‌।

 

তারাবীর নামাজের দোয়া ‌

 

আমাদের দেশে তারাবীর নামাজে প্রতি চার রাকাত পর পর এই দোয়াটি পড়ার প্রচলন আছে।‌ হাদীস থেকে জানা যায় এটি মূলত ফেরেশতাদের তাসবীহ । এটি পড়া জায়েজ । তবে পাঠ করা বাধ্যতামূলক নয় । আর সেই দোয়া টি হল-

سبحان ذى الملك والملكوت سبحان ذى العزة والعظمة والهيبة والقدرة والكبرياء والجبروت . سبحان الملك الحى الذى لاينام ولا يموت سبوح قدوس ربنا ورب الملئكة والروح.

 

তারাবী নামাজের দোয়া বাংলা উচ্চারণ 

 

সুবহানাজিল মুলকি ওয়াল মালাকুতি সুবহানাজিল ইজ্জাতি ওয়াল আজমাতি ওয়াল হাইবাতি ওয়াল কুদরতি ওয়াল কিবরিয়ায়ি ওয়াল জাবারুতি সুবহানাল মালিকিল হাইয়ুল্লাজি লা‌ ইয়ানামু ওয়া ইয়ামুতু সুব্বুহুন কুদ্দুসুন ওয়া রাব্বুনা ওয়া রাব্বুন মালাইকাতি ওয়ার রুহ ।

 

অনুবাদ: আল্লাহ পবিত্রময় সাম্রাজ্য ও মহত্ত্বের মালিক ।‌ তিনি পবিত্রময় সম্মান মহত্ব, প্রতিপত্তিশালী সত্তা । ক্ষমতাবান, গৌরবময় ও প্রতাবশালী । তিনি পবিত্রময় ও রাজাধিরাজ ।‌যিনি চিরঞ্জীব ।‌ কখনো ঘুমান না এবং চির মৃত্যুহীন সত্তা । তিনি পবিত্র ও বরকতময় আমাদের প্রতিপালক ফেরেশতাকুল এবং জিবরাঈল আলাইহিস সালামের প্রতিপালক ।

( রদ্দুল মুহতার, খণ্ড ১ পৃষ্ঠা ৫২২, ফাতওয়ায়ে দারুল উলুম: খণ্ড ৪ পৃষ্ঠা ২৪৬ )

 

 

তারাবীর নামাজের মুনাজাত

 

اَللَهُمَّ اِنَّا نَسْئَالُكَ الْجَنَّةَ وَ نَعُوْذُبِكَ مِنَ النَّارِ يَا خَالِقَ الْجَنَّةَ وَالنَّارِ- بِرَحْمَتِكَ يَاعَزِيْزُ يَا غَفَّارُ يَا كَرِيْمُ يَا سَتَّارُ يَا رَحِيْمُ يَاجَبَّارُ يَاخَالِقُ يَابَارُّ – اَللَّهُمَّ اَجِرْنَا مِنَ النَّارِ يَا مُجِيْرُ يَا مُجِيْرُ يَا مُجِيْرُ- بِرَحْمَتِكَ يَا اَرْحَمَ الرَّحِمِيْنَ.

তারাবীহ নামাজের মোনাজাত

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ইন্না নাস আলুকাল্ জান্নাতা ওয়া নাউজুবিকা মিনান নার ইয়া খলিকুল জান্নাতা ওয়ান নার , বিরাহমাতিক ইয়া আজিজু ইয়া গাফ্ফারু, ইয়া কারীমু, ইয়া সাত্তারু, ইয়া রাহিমু ,ইয়া জাব্বারু ইয়া খালেকু, ইয়া রাররূ, আল্লাহুমা আজির না মিনান্নারি, ইয়া মূজিরু ইয়া মুজিরু, বিরাহমাতিকা ইয়া আরহামার রাহিমীন।

বিশেষ দ্রষ্টব্য : তারাবীর মুনাজাতে এ এই দোয়াটি পড়া বাধ্যতামূলক নয় ।‌ যেকোনো দোয়া করা যেতে পারে । তবে বেশিরভাগ মসজিদের ইমাম হাফেজগণ এই দোয়া টি পড়ে থাকেন ।‌

 

তারাবীহ নামাজের ফজিলত

 

১ নং হাদীস

 

হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আউফ রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু বর্ণনা করেন । নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ তাআলা তোমাদের উপর রোজা ফরয করেছেন আর আমি কিয়ামুল লাইল অর্থাৎ তারাবীর নামাজকে সুন্নাত করেছি । সুতরাং যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সওয়াবের আশায় রমজানের রোজা ও তাবাবীর নামাজ আদায় করবে সে ঐদিনের মতো নিষ্পাপ হয়ে যাবে যেদিন সে মাতৃগর্ভ থেকে সদ্য ভূমিষ্ঠ হয়েছিল । ( মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং ১৬৬০

 

তারাবী নামাজ সম্পর্কে হাদীস

 

হযরত আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু বলেন , নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে সওয়াবের নিয়তে

রমজান মাসে নামাজ কায়েম করবে । তার জন্য পূর্ববর্তী (সগিরা) গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে । (বুখারী ও মুসলিম ‌)

 

তারাবীর নামাজের ইতিহাস

 

হাদীসে বর্ণিত আছে, যে দিন নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্ব প্রথম তারাবীর নামাজ পড়লেন সেদিন কিছু সংখ্যক সাহাবায়ে কেরাম তার সঙ্গে অংশগ্রহণ করেন । পরের দিন আরও বেশি লোক নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে জামাতে শরীক হন ।‌ তৃতীয় দিনও প্রচুর লোক সমাগম হয় । আর চতুর্থ দিন মসজিদ লোকে লোকারণ্য হয়ে যায় । সকলে বসে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে জামাতে নামাজ পড়ার অপেক্ষা করতে থাকেন ।‌

 

 

কিন্তু নবী কারীম সাল্লাল্লাহু সাল্লাম সেদিন আর মসজিদে হাজির হলেন না । ঘরেই নামাজ পড়েন নিলেন। পরদিন ফজরের নামাজ শেষে উপস্থিত লোকদের উদ্দেশ্যে বললেন, গত রাতে আপনারা আমার জন্য দীর্ঘক্ষন অপেক্ষায় বসে ছিলেন ।‌ আমিও আপনাদের উপস্থিতি ও বসে থাকা সবই জানতাম তবুও আসিনি । কেননা মসজিদে আসলে আমাকে অবশ্যই তারাবীর নামাজ পড়তে হতো ।

 

এই ইবাদাত নিয়মিতভাবে করলে আমার উম্মতের উপর ফরজ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে । তাই আমি এর থেকে মাঝে মধ্যে বিরত থাকি । অবশ্য সাহাবায়ে কেরাম এ নামাজ নিয়মিত পড়তেন ।

 

নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম কত রাকাত তারাবীহ পড়েছেন তা সুস্পষ্ট ও সুনির্দিষ্টভাবে কোন সহীহ সূত্রে জানা যায় না ।

 

তবে খোলাফায়ে রাশেদার যুগে দ্বিতীয় খলীফা আমীরুল মুমিনীন হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু‌ রাষ্ট্রীয়ভাবে তারাবীর নামাজ জামাতের সাথে পড়ার ইন্তেজাম করেন ।

 

তখন থেকে ২০ রাকাত‌ শুরু হয়েছে । যা এখন পর্যন্ত চলছে ।‌ অতঃপর প্রায় পনেরো বছর এ দীর্ঘ সময় কোথাও আট রাকাত পড়ার প্রচলন ছিল না । উম্মতের অবিচ্ছিন্ন কর্মধারায় প্রমাণ করে যে নবী কারীম থেকে সাহাবায়ে কেরাম ২০ রাকাতের তালিম পেয়েছেন । তাছাড়া এটা হযরত ওমর রাদিআল্লাহু চালু করা আমল মনে করে খাটো করে দেখার কোন সুযোগ নেই ‌। কেননা হাদীসে এসেছে তোমরা আমার ও খোলাফায়ে রাশেদার সুন্নাতকে আঁকড়ে ধরবে । ( আবু দাউদ )

 

 

তারাবীহ নামাজ কয়  রাকাত?

 

হযরত ওমর রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু এর যুগ থেকে ২০ রাকাত তারাবীহ নামাজ পড়া হতো ।‌ নিম্নে কিছু হাদীস ও আসার দলীল হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে ।

 

তারাবি নামাজ ২০ রাকাআত  দলীলঃ

 

হযরত ইয়াজিদ ইবনে রূমান রহ: থেকে বর্ণিত । তিনি বলেন হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু এর সময় সাহাবাগণ রমজানে তারাবীর নামাজ ২০ রাকাত নামাজ এবং বিতর তিন রাকাতসহ মোট ২৩ রাকাত নামাজ আদায় করতেন ।‌ (মুয়াত্তা মালেক, হাদীস নং ৩৮০)

 

২ নং দলীলঃ

 

হযরত ইবনে আব্বাস রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণিত । তিনি বলেন নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম রমজান মাসে জামাত ছাড়াই ৩০ রাকাত (তারাবীহ ) ও বিতর পড়তেন । ( সুনানে কুবরা, বাইহাকী হাদীস নং ৪৬১৫ )

 

৩ নং দলীলঃ

 

হযরত সায়েব বিন ইয়াযি রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণিত । তিনি বলেন সাহাবায়ে কেরাম ও তাবেয়ীন ওমর রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু এর যুগে রমজান মাসে ২০ রাকাত তারাবীহ পড়তেন । রাবী বলেন তারা ইমামগণ তারাবীর নামাজ পড়তেন । আর হযরত উসমান রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু এর যুগে মুসল্লীরা দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকার কষ্টে লাঠিতে ভর দিয়ে থাকতেন । ( সুনানে কুবরা, বাইহাকী হাদীস নং ৪৬১৭)

 

তারাবীহ নামাজ ২০ রাকাআত  দলীলঃ

 

হযরত আতা রহ: থেকে বর্ণিত । তিনি বলেন আমি লোকদেরকে তথা সাহাবাও শীর্ষস্থানীয় তাবেয়ীনকে ২০ রাকাত তারাবীহ পড়তে দেখেছি ।

( মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং ৭৭৭০)

 

৫ নং দলীলঃ

 

আবুল খাসীব রহ: বর্ণনা করেন সুওয়াইদ বিন গাফালা রহ: ( যিনি ছিলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর যুগে মুসলমান হওয়া বিখ্যাত তাবেয়ী ) রমজান মাসে আমাদেরকে নিয়ে ইমামতি করতেন । তাতে তিনি চার রাকাত পরপর পাঁচবার বিশ্রাম নিয়ে ২০ রাকাত তারাবীহ পরাতেন । উল্লেখ্য যে এটা ছিল সাহাবাদের ঘটনা । ( আসারুস সুনান, হাদীস নং ৭৮২)

 

তারাবীহ নামাজ কত রাকাআত

৬ নং দলীলঃ

হযরত নাফে বিন উমার রহ: থেকে বর্ণিত । তিনি বলেন ইবনে আবী মুলাইকা রহ আমাদেরকে নিয়ে রমজানে ২০ রাকাত তারাবীহ নামাজ পড়াতেন । আর এক রাকাতে সূরা ফাতির এর মত ( বড় বড় সূরা ) দ্বারা পড়াতেন । ( মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং ৭৭৬৫)

 

৭ নং দলীলঃ

হযরত সাঈদ বিন উবাই রহ: থেকে বর্ণিত ।‌ আলী বিন রবীয়া রহ: তাদেরকে নিয়ে রমজান মাসে পাঁচ তারবীহা তথা ২০ রাকাত বিতরও পড়াতেন। উল্লেখ্য যে, এক তারবীহাতে চার রাকাত তারাবীহ হয় ।

( মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং ৭৭৭২)

 

 

 

২০ রাকাত তারাবীর দলীল

 

প্রথম দলীল:

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণিত বিশুদ্ধ হাদীসের রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আমল দ্বারা ২০ রাকাত তারাবীহ নামায প্রমাণিত। (আল মুসান্নাফ হাদীস নং ৭৬৯১, এছাড়া হাদীসের প্রসিদ্ধ কিতাব বাইহাকী হাদীস নং ৪৬১৫, ৪৬১৭, তাবারানী ,হাদীস নং ৭৭৩৩,)

দ্বিতীয় দলীল:

দ্বিতীয় খলীফা হযরত উমর রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু তার খেলাফত আমলে মসজিদে নববীর মধ্যে তারাবীহ নামাযের অনেকগুলো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জামাতকে একত্র করে হযরত উবাই বিন কাআব রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু এর ইমামতীতে ২০ রাকাত তারাবীহ নামাযের হুকুম দিয়েছিলেন।

 

সকল সাহাবায়ে কেরাম রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু তাঁর সমর্থন করেছিলেন। তারাবীহ নামায যদি নবীজি থেকে ২০ রাকাত প্রমাণিত না হতো তাহলে সাহাবায়ে কেরাম অবশ্যই আপত্তি তুলতেন । (বাইহাকী, হাদীস নং ৪৬১৭,৪৬২০, ৪৬২১, মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হাদীস নং ৭৭৩২, বুখারী হাদীস নং ২০১০, বাদায়েউস সানায়ে-১/৬৪৪)

তৃতীয় দলীল:

 

 

তৃতীয় খলীফা হযরত উসমান গনী রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু চতুর্থ খলীফা হযরত আলী রাদিআল্লাহু তাআলা আনহুসহ সাহাবায়ে কিরামের ঐক্যমতে, উম্মাতে মুসলিমার প্রায় পনেরো শত বছর পর্যন্ত ধারাবাহিক আমল তারাবীহ নামায বিশ রাকাত চলে আসছে। যা আজ পর্যন্ত বাইতুল্লাহ শরীফ ও মসজিদে নববীতে চালু আছে। (বাইহাকী কুবরা, হাদীস নং ৪৬১৭, শরহুল মুহাজ্জাব পৃঃ ৩/৩৬৩-৩৬৪)

চতুর্থ দলীল:

 

 

ইমাম আজম আবু হানীফা রহ. ইমাম মালেক রহ. ইমাম শাফেয়ী রহ., ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহ. যারা প্রত্যেকে স্বীয় যামানায় সব চেয়ে বড় কুরআন ও হাদীস বিশারদ ও ফকীহ ছিলেন তাদের সকলের মতে তারাবীহ নামায ২০ রাকাত । ৮ রাকাত নয়। (ইলাউস সুনান পৃঃ ৭/৬৯/৭১, শরহুস্ সুন্নাহ পৃঃ ২/৫১১, মুগনী পৃঃ ২/৬০৪)

 

আট রাকাত তারাবীর সূচনা

 

৮ রাকাত‌ তারাবীর স্লোগান তোলা ভাইয়েরা প্রথম প্রথম ২০ রাকাত তারাবীহ পড়ে গেছেন । সর্বপ্রথম ১২৮৪ হিজরী সালে ভারতের আকবরাবাদ থেকে এদের একজন ৮ রাকাত তারাবীর ফতোয়া দেন । তীব্র প্রতিবাদের মুখে সেই ফতোয়া টিকতে পারেনি । এরপর ১২৮৫ হিজরীতে পাঞ্জাব সীমান্তে মাওলানা মোহাম্মদ হুসাইন বাটালভী নামে এদের আরেকজন ফতোয়া দেন ৮ রাকাত তারাবীহ পড়া সুন্নাত । বিশ রাকাত পড়া বিদআত । বলা হয় পাঞ্জাবের অনেক স্থানে তার মাধ্যমেই ৮ রাকাত তারাবীর প্রথম প্রচলন শুরু হয় । তার ফতোয়ার তীব্র বিরোধিতা হয় । এমনকি তাদেরই একজন বিখ্যাত আলেম মাওলানা গোলাম রসূল ঐ ফতোয়ার খণ্ডনে রিসালা তারাবী নামে একটি পুস্তিকা রচনা করেন । ১২৯১ সালে সেটি প্রকাশিত হয় । ( সূত্র রাসায়েলে আহলে হাদীস, খণ্ড নং ২ পৃষ্ঠা নং ২৮)

 

হাফেজ আব্দুল্লাহ গাজীপুরী ও মাওলানা আব্দুর রহমান মোবারকপুরী সহ এদের আরো কিছু আলেম ও একই ফতুয়া প্রচার করতে থাকেন ।

ভারতবর্ষের পরে সৌদি আরবেও দু একজন ৮ রাকাতের পক্ষে ফতোয়া দিতে শুরু করেন । হারামাইন শরীফাইন ও মসজিদে নববীতে ২০ রাকাত তারাবীহ অব্যাহত থাকলেও আরবে সর্বপ্রথম শাইখ নসীব রেফায়ী একটি পুস্তিকা লিখে আট রাকাতের ফতোয়াকে প্রমাণ করার চেষ্টা করেন ‌। শায়খ নাসিরুদ্দীন আলবানী ও তার সমর্থন করেন । তাদের বক্তব্য খন্ডনে আরব জাহানের কয়েকজন আলেম কলম ধরেন এবং সম্মিলিত রচনা প্রকাশ করেন । শাইখ নাসিরুদ্দীন আলবানী সেই সম্মিলিত কিতাবের খন্ডনে তাসদীদুল ইসাবাহ নামে একটি পুস্তিকা রচনা করে ১৩৭৭ হিজরী সালে প্রকাশ করেন । কিন্তু উক্ত গ্রন্থেও তিনি কোন‌ সাহাবী , তাবেয়ী , তাবে-তাবেঈন গণের কোন একজনকে দেখাতে পারেননি যিনি ৮ রাকাত তারাবীর কথা বলেছেন । এমনিভাবে এমন কোন ঐতিহাসিক মসজিদ দেখাতে পারেননি যেখানে ৮ রাকাত তারাবীহ হতো ।

 

 

আলবানী সাহেবের পুস্তিকাটির যথোপযুক্ত জবাব দিয়েছেন সৌদি আরবের কেন্দ্রীয় দারুল‌ ইফতার সাবেক গবেষক মুহাদ্দিস ইসমাইল আনসারী রহ: । তাঁর কিতাবের নাম তাসহীহু হাদীসি সালাতুত তারাবীহ ইশরীনা রাকআতান ওয়ার রাদ্দু আলাল আলবানী ফি তাযয়ীফিহী । একইভাবে সৌদি আরবের বিখ্যাত আলেম মসজিদে নববীর প্রসিদ্ধ মুদাররিস ও মদীনা শরীফে সাবেক কাজী শাইখ আতিয়্যা সালিম-আত তারাবীহ আকসারু মিন আলফি আম নামে একটি মূল্যবান গ্রন্থ রচনা করেন ‌।

 

সৌদির আর একজন খ্যাতনামা আলেম বহু গ্রন্থ প্রণেতা শায়খ মোহাম্মদ আলী সাবুনী সাহেব ও এ বিষয়ে আত তারাবীহ ইশরীনা রাকআতান নামে আরেকটি গ্রন্থ রচনা করেন ‌। আরো অসংখ্য বিখ্যাত আলেম ওলামা আট রাকাত তারাবীর বিরুদ্ধে বই লিখেছেন ।

 

এখনো বই লিখছেন । ৮ রাকাতের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন । এখনও বলছেন । তাদের সবার উদ্দেশ্য একটাই জাতির কাছে সঠিক তথ্য গুলো পৌছে দেওয়া। আল্লাহ তাআলা সবাইকে সত্যটা বোঝার তাওফিক দান করুন । আমীন।‌

 

 

৮ রাকাত তারাবীর দলীল

 

যেসব দ্বীনি ভাইয়েরা ৮ রাকাত তারাবীর কথা বলে থাকেন তারা মূলত এই হাদীসটি দলীল হিসেবে পেশ করে থাকেন ।

হযরত আবু সালামা বিন আব্দুর রহমান রহ: থেকে বর্ণিত যে , তিনি হযরত আয়েশা রাদিআল্লাহু তাআলা আনহা কে জিজ্ঞাসা করলেন রমজান ও অন্যান্য মাসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নামাজ কেমন ছিল ? তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমজান ও অন্যান্য মাসে ১১ রাকাতের বেশি পড়তেন না ।‌ প্রথমে চার রাকাত পড়তেন ।‌ তুমি এর সৌন্দর্য ও দীর্ঘ তা নিয়ে প্রশ্ন করো না । এরপর আবার চার রাকাত পড়তেন । তুমি এর সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করো না । এরপর তিনি তিন রাকাত নামাজ পড়তেন । ( সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২০১৩)

এই হাদীস পেশ করে তারা বলে থাকেন তারাবীহ আট রাকাত আর বিতর তিন রাকাত । কিন্তু ওই ভাইয়েরা আবার অন্য সময় বলে থাকেন বিতর নামাজ এক রাকাত । তাহলে বিতর নিয়ে তাদের বক্তব্য দুই রকম পাওয়া যাচ্ছে । সাধারণ মানুষ কোনটা গ্রহণ করবে ?

একটু ভালো করে হাদীসটা পড়ে দেখুন । এই হাদীস থেকে তারাবীর নামাজ প্রমাণিত হয় না । বরং এটা তাহাজ্জুদ বলে প্রতীয়মান হয় । এই পয়েন্টগুলো লক্ষ্য করুন ।

১. তারাবীর নামাজ শুধু রমজান মাসে পড়া হয় ।‌ অথচ উক্ত হাদীসে সারা বছর রাতের নামাজের কথা বলা হয়েছে ।‌ যা একমাত্র তাহাজ্জুদের বেলায় প্রযোজ্য হয়। কেননা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সারাবছর তাহাজ্জুদ নামাজ পড়তেন ।

২. তারাবির নামাজ দুই রাকাত করে পড়া হয় অথচ উক্ত হাদীসে চার রাকাত করে পড়ার কথা বর্ণিত হয়েছে ।

৩. হযরত আয়েশা রাদিআল্লাহু তাআলা আনহার বাচনভঙ্গি থেকে বোঝা যায় । রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নামাজ খুব দীর্ঘায়িত হতো । অথচ তারাবীর নামাজ স্বাভাবিক নিয়মে পড়া হয় । একমাত্র তাহাজ্জুদ হলেই এরকম দীর্ঘ নামাজ হতে পারে ।

৪. তারাবীর নামাজ পড়া হয় রাতের প্রথমে । অথচ এই হাদীসের ভাষ্য বোঝা যায় এটা শেষ রাতের নামাজ ছিল । যেহেতু তিনি এই ৮ রাকাত নামাজের পর আরও তিন রাকাত নামাজ পড়তেন । যা ছিল বিতরের নামাজ । আর এটা স্বতঃসিদ্ধ যে নবীজি বিতর নামাজ শেষ রাতে পড়তেন ।‌ আর তার পূর্বে তাহাজ্জুদের নামাজ পড়তেন । বোঝা গেল আয়েশা রাদিআল্লাহু তাআলা আনহা এর উক্ত হাদীসে তাহাজ্জুদের আলোচনায় এসেছে । তারাবীর নামাজের কথা উল্লেখ নেই ।

 

 

 

তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ কি এক ?

 

তারাবীহ ও‌‌ তাহাজ্জুদ নামাজ এক নয় । উল্লেখিত আলোচনাগুলো বুঝে থাকলে নতুন করে আলোচনার বা দলীল দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না । তবুও একটু বুঝিয়ে বলছি লক্ষ্য করুন । তারাবীহ ও‌ তাহাজ্জুদ সম্পূর্ণ ভিন্ন দুটি নামাজ । দলীল নিম্নরূপ-

তাহাজ্জুদ নামাজ কুরআন দ্বারা প্রমাণিত। যথা পবিত্র কুরআনের আয়াত-

 

وَمِنَ اللَّيْلِ فَتَهَجَّدْ بِهِ نَافِلَةً لَّكَ عَسَىٰ أَن يَبْعَثَكَ رَبُّكَ مَقَامًا مَّحْمُودًا [١٧:٧٩]

অনুবাদ: রাত্রির কিছু অংশ কোরআন পাঠসহ জাগ্রত

থাকুন। এটা আপনার জন্যে অতিরিক্ত। হয়ত বা আপনার পালনকর্তা আপনাকে মোকামে মাহমুদে পৌঁছাবেন। (আল ইসরা-৭৯)

 

আর তারাবীহ নামায রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। যেমন-

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-

شَهْرٌ كَتَبَ اللَّهُ عَلَيْكُمْ صِيَامَهُ، وَسَنَنْتُ لَكُمْ قِيَامَهُ،

অনুবাদ: এটি এমন মাস যাতে আল্লাহ তাআলা তোমাদের জন্য রোযাকে ফরজ করেছেন, আর আমি তোমাদের জন্য এর রাতের নামাযকে সুন্নত করেছি। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-১৩২৮, সুনানে নাসায়ী, হাদীসস নং-২২১০)

আপনার জন্যঃ

 

সুতরাং আপনার এবার বলুন তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ কি এক নামাজ হলো‌? তাহাজ্জুদ মক্কায় থাকা অবস্থায় শরীয়ত সিদ্ধ ইবাদত সাব্যস্ত হয় । আর তারাবীহ মাশরূ হয় মদীনায়। তাহলে এক কিভাবে হল? তাহাজ্জুদ নামাজ প্রথমে ফরজ ছিল । পরবর্তীতে সুন্নাত-নফল করে দেওয়া হয়েছে ‌। কিন্তু তারাবীর নামাজ প্রথম থেকে সুন্নাত ছিল ।‌ তাহলে দুই নামাজ এক হলো কিভাবে ? (কারো যদি কোন আপত্তি থাকে দলীল ভিত্তিক কমেন্ট করে আমাকে বোঝান । আমিও দলীল ভিত্তিক জবাব দেবো ইনশাআল্লাহ ‌ ‌)

 

কত রাকাত তারাবীহ পড়বেন ?

 

প্রিয় পাঠক । বাজারে প্রচলিত ৮ রাকাত তারাবীহ এবং ২০ রাকাত শীর্ষক বিভিন্ন বই আছে । বিভিন্ন সাইটের মধ্যেও পক্ষ বিপক্ষ সংক্রান্ত তথ্য আছে । ইউটিউবেও অনেক বক্তার এ নিয়ে বেশ তর্ক বিতর্ক আছে । কোনটি সহীহ আর কোনটি ভুল পুরো আলোচনাটি পাঠ করলে অবশ্যই বুঝতে পেরেছেন ।

 

সবাইকে অনুরোধ করে বলব অনর্থক তর্ক-বিতর্ক বন্ধ করুন । এ সব বিষয়ে ডিবেট করে বিশেষ কোনো ফায়দা হয় না । শেষ পর্যায়ে সবাই সবার মাসলাকের অনুসরণ করতে থাকে । তাই বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ি না করে যেসব ভাইয়েরা নামায পড়ে না, রোজা রাখে না, তারাবীহ পড়তে আসে না তাদেরকে বুঝিয়ে মসজিদে আনার চেষ্টা করুন । এই হাদীসটি দেখুন ‌।

 

 

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সম্মানিতা স্ত্রী হযরত আয়শা সিদ্দিকা রাদিআল্লাহু তাআলা ইরশাদ করেনঃ যখন রমজান মাস আসে, তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোমর বেঁধে ফেলেন। তিনি তার বিছানায়  আর ফিরে আসতেন না রমজান মাস শেষ হওয়া পর্যন্ত। ( সহীহ ইবনে খুজাইমা, হাদীস নং-৩৪২, শুয়াবুল ঈমান-৩/৩১০, হাদীস নং-৩৬২৪)

 

এবার আট রাকাত পড়ে দ্রুত বিছানায় যাবেন নাকি কোমর বেঁধে ২০ রাকাত পূর্ণ করে হাদীস অনুসরণ করবেন । সিদ্ধান্ত আপনার উপর ছেড়ে দেয়া হলো ।

 

 

তারাবীতে কুরআন খতম পদ্ধতি

 

পবিত্র কুরআনুল কারীম প্রতি মাসে এক খতম করা উচিত। তবে সাত দিনে খতম করা সবচেয়ে উত্তম । আর এক খতম করতে গিয়ে ৪০ দিনের বেশি সময় লাগানো উচিত নয় । হাদীসে এসেছে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোরআনুল কারীম খতম করতে ৪০ দিনের বেশি লাগালো সে অনেক দেরী করে ফেলল । তাই রোজার মাসে গুরুত্ব দিয়ে রুটিন করে কুরআন পড়া উচিত । যেন অনেকগুলো খতম করা সম্ভব হয়।

 

 

যদি তারাবীর মধ্যে কোরআন খতমের সওয়াব নিতে চান তাহলে সেক্ষেত্রে এই হাদীসটি স্মরণযোগ্য । হযরত আবু যর গিফারী রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু বর্ণনা করেন । নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি ইমামের সঙ্গে তারাবীহ নামাজ পড়লো, ইমাম প্রস্থান করা পর্যন্ত ( জামাতে নামাজ সমাপ্ত করে গেল ) তার কিয়ামুল লাইল (রাত জাগরণের পূর্ণ সওয়াব ) লিখিত হবে ।

 

 

হযরত উসমান রাদিআল্লাহু আনহু, হযরত উবাই ইবনে কাব রাদিআল্লাহু প্রমুখ সাহাবী প্রতিদিন যত টুকু তেলাওয়াত করতেন তা মঞ্জিল নামে পরিচিত । তাই কোরআন ৭ মঞ্জিলে বিভাজিত হয়েছে । পরবর্তী সময়ে এক মাসে খতম সম্পন্ন করার জন্য কোরআনুল কারীমকে সমান ৩০ ভাগে বিভক্ত করা হয় । যা পারা নামে পরিচিত ।

 

 

এরপর আরো সহজ করার জন্য প্রতিটি পারা কে সমান দুই ভাগে ভাগ করা হয় হয়েছে । এর প্রতিটি অংশকে নিসফ বলা হয় । অর্থাৎ এর অর্থ হল অর্ধেক । প্রতিদিন এতটুকু পরিমান তেলাওয়াত করলে প্রতি দুই মাসে এক খতম হয় । এভাবে এক-তৃতীয়াংশ দুই-তৃতীয়াংশ প্রতিদিন এই পরিমাণ পড়লেও প্রতি তিন মাসে একবার খতম হবে ।

 

সর্বশেষ আসে এক চতুর্থাংশ যদি কেউ প্রতিদিন এইটুকু তেলাওয়াত করেন তাহলেও প্রতি চার মাসে তার এক খতম হবে । তবে হাফেজগণ তারাবীতে প্রথমদিকে কোরআনে কারিম বেশি করে পাঠ করে থাকেন । দেড় পারা করে ।‌ যেন ২৭ রমজানে খতম করা যায় এরকম খেয়ালে ।

 

 

তারাবীহ সহ সকল প্রকার নামাযে তাজবীদের সাথে তিলাওয়াত করা জরুরী। তাজবীদ বিহীন অস্পষ্ট অতি দ্রুত তিলাওয়াত শরীআতে নিষেধ। (সূরায়ে মযযাম্মিল ৪ তাফসীরে মাজহারী পৃঃ৯/১০ )

 

শেষ কথাঃ

 

প্রিয় পাঠক। উল্লেখিত আলোচনাগুলো থেকে উপকৃত হলে আমরা ধন্য হব । আর যদি কারো কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে কমেন্ট করুন । দ্রুত দলীল ভিত্তিক জবাব দেওয়া হবে ইনশাআল্লাহ । যে যেখানে থাকেন ভালো থাকুন । সুস্থ থাকুন । আজ এ পর্যন্তই । আল্লাহ হাফেজ ।

 

লিখেছেনঃ

মাওলানা শরিফ আহমাদ