কিয়ামতের দিন আল্লাহর আরশের নীচে যারা ছায়া পাবে | দীদার মাহদী

দীদার মাহদী

কিয়ামত ৷ ধ্রুব সত্য একটি জিনিস ৷ যা অবশ্যম্ভাবী ৷ আসবেই ৷ হবেই ৷ কেউ কিয়ামত থেকে রেহাই পাবে না ৷ প্রতিটি মাখলুককেই কাল কিয়ামতের দিন মহান আল্লাহর কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। দিতে হবে জীবনের হিসাব ৷ কিয়ামতের ময়দানের সেই কঠিন মুহূর্তের বর্ণনা দিতে গিয়ে রাসুল (সা.) বলেন, কিয়ামতের দিন মানবমণ্ডলীকে লাল শ্বেত মিশ্রিত এমন এক সমতল ভূমিতে একত্র করা হবে, যেন তা পরিচ্ছন্ন আটার রুটির মতো। ওই জমিনে কারো (বাড়িঘরের বা অন্য কিছুর) চিহ্ন থাকবে না। (বুখারি ও মুসলিম)

কিয়ামতের দিনটি প্রচণ্ড উত্তপ্ত থাকবে। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, বিচার দিবসে সূর্যকে মানুষের কাছে আনা হবে, তা হবে তাদের থেকে এক ফরসাখ (তিন মাইল) দূরে। ব্যক্তির আমল অনুযায়ী ঘামের মধ্যে অবস্থান করবে। কারো ঘাম হবে টাখনুসমান, কারো হাঁটুসমান, কারো কোমরসমান, কারো মুখসমান। (মিশকাত, পৃষ্ঠা : ৪৮৩)

সেই বিভীষিকাময় মুহূর্তে মহান আল্লাহ কিছু মানুষকে তাঁর রহমতের ছায়াতলে আশ্রয় দেবেন। তারাই হবে সেদিনের শ্রেষ্ঠ মানুষ ৷ রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, যেদিন আল্লাহর (রহমতের) ছায়া ছাড়া আর কোনো ছায়া থাকবে না, সেদিন সাত ব্যক্তিকে আল্লাহ তাআলা তাঁর নিজের (আরশের) ছায়ায় আশ্রয় দেবেন। (বুখারি, হাদিস : ৬৬০)

১. ন্যায়পরায়ণ শাসক : মহান আল্লাহ এই শ্রেণির লোকদের ভীষণ ভালোবাসেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, নিশ্চয়ই আল্লাহ সুবিচারকারীদের ভালোবাসেন। (সুরা হুজরাত, আয়াত : ৯)

যদিও পাওয়ার বা ক্ষমতা পেয়ে মানুষ বেসামাল হয়ে পড়ে ৷ ক্ষমতা এমন এক জিনিস যা মানুষকে অস্থীর করে তোলে ৷ সবাই এর ন্যায্যতা রক্ষা করতে পারে না ৷ জুলুম পীড়ন দিয়ে ছেয়ে ফেলে জীবন ৷ কিন্তু তারপরও কিছু ন্যায়পরায়ন শাসক, ইনসাফগার প্রশাসক পৃথিবীতে থাকবে ৷ তাদেরই আল্লাহ তাঁর ইনসাফের প্রতীক আরশে আজীমের নীচে ছায়া দিবেন ৷

২. যে যুবকের জীবন গড়ে উঠেছে তার প্রতিপালকের ইবাদতের মধ্যে : যৌবন মহান আল্লাহর অনেক বড় নিয়ামত। এই নিয়ামতকে যারা আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করে, তারাই সফল হয়। সাধারণত যৌবন মানুষকে বেপরোয়া বানিয়ে দেয়, যৌবনের তাড়নায় কেউ কেউ ডুবে যায় পাপের সাগরে। এই যৌবনকে যারা আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করবে, তারা কঠিন কিয়ামতের দিন আল্লাহর আরশের ছায়াতলে আশ্রয় পাবে। যৌবন পাগলা ঘোড়ার মতো ৷ এর লাগাম না টেনে ধরলে জীবনকে তছনছ করে দেয় ৷ দেয় ধ্বংস করে ৷ যারা যৌবনের উচ্ছ্বলতাকে অসৎ পথে ব্যয়িত না করে সৎ ও সততার জন্য উৎসর্গ করতে পারবে, তারাই আল্লাহর এ নেয়ামতের উত্তরাধীকার হবে ৷

৩. যার অন্তর মসজিদের সঙ্গে লেগে থাকে : আল্লামা নববী (রহ.) বলেন, মসজিদের সঙ্গে অন্তরের সম্পৃক্ততা দ্বারা উদ্দেশ্য, মসজিদের প্রতি অগাধ ভালোবাসা। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ গুরুত্বসহকারে মসজিদে পড়া। সার্বক্ষণিক মসজিদে বসে থাকা নয়। (উমদাতুল কারি : ৫/২৬১)

৪. ওই দুই ব্যক্তি, যারা পরস্পরকে ভালোবাসে আল্লাহর জন্য : (তারা একত্র হয় আল্লাহর জন্য এবং পৃথকও হয় আল্লাহর জন্য)। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, কিয়ামতের দিন মহান আল্লাহ বলবেন, সেসব মানুষ কোথায়, যারা আমার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে পরস্পর পরস্পরকে ভালোবাসত। আজ আমি তাদের আমার আরশের ছায়াতলে আশ্রয় দেব। আজকের দিনটা এমনই যে আজ আমার ছায়া ছাড়া কোথাও কোনো ছায়া নেই। (মুআত্তায়ে মালিক, হাদিস : ১৭১৮)

৫. সে ব্যক্তি, যাকে কোনো উচ্চ বংশীয় রূপসী নারী আহ্বান জানায়, কিন্তু সে এ বলে প্রত্যাখ্যান করে যে ‘আমি আল্লাহকে ভয় করি’। সেই সব মুত্তাকিকে মহান আল্লাহ কিয়ামতের দিন তাঁর আরশের ছায়াতলে আশ্রয় দেবেন।

৬. সে ব্যক্তি, যে এমন গোপনে দান করে যে তার ডান হাত যা খরচ করে বাম হাত তা জানে না। এর দ্বারা উদ্দেশ্য একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য দান-সদকাকারীকে মহান আল্লাহ কিয়ামতের দিন আরশের ছায়াতলে আশ্রয় দেবেন।

৭. সে ব্যক্তি, যে নির্জনে আল্লাহর জিকির করে, ফলে তার দুই চোখ দিয়ে অশ্রুধারা বইতে থাকে।

উপরোক্ত গুণগুলো একজন খাঁটি মুত্তাকির মধ্যেই পাওয়া যায়। যারা জান্নাতী হবে নিশ্চয়ই এ বৈশিষ্ট্যগুলো তাদের মাঝে বিদ্যমান থাকবে ৷ মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে পরিপূর্ণ  তাকওয়া অর্জনের তাওফিক দান করুন। কিয়ামতের কঠিন মুহূর্তে তিনি যেনো আমাদের ভুলে না যান ৷ আমিন।

লেখকঃ ভাইস প্রিন্সিপ্যাল, দারুলহুদা মডেল মাদরাসা, কোদালপুর, গোসাইরহাট, শরীয়তপুর ৷

Leave a Comment