মৃত ব্যক্তির জন্য কুরআন খতম বা ঈসালে সওয়াব করা যাবে কি?

মৃত ব্যক্তির জন্য কুরআন খতম বা ঈসালে সওয়াব করা যাবে কি?

আমাদের মাঝে একটি বিভ্রান্তি আছে ৷ চলমান সময়ে বিভ্রান্তিটি ডালপালা বিস্তার করছে ৷ আর তা হলো, মৃত ব্যক্তির জন্য কুরআন খতম করা যাবে না ৷ আমরা আজকের নিবন্ধে কুরআন সুন্নাহর আলোকে বিষয়টি নিয়ে কথা বলবো ৷

মূল বিষয় হলো একজন মানুষ মরে গেলে তার জন্য কেউ আমল করে সওয়াব পাঠাতে পারে কিনা ৷ যদি পারে, তবে সেটা কী আমল? সালাত, সিয়াম, তিলাওয়াত, সাদকা নাকি সব ধরণের আমলই?

ইসলামী পরিভাষায় মৃতের জন্য কোনো আমল করে সওয়াব পাঠানোকে ঈসালে সাওয়াব বলে ৷ ঈসাল মানে হল, পৌঁছানো। আর সওয়াব মানেতো সওয়াব, পূণ্য। তাহলে ঈসালে সওয়াব মানে হল, সওয়াব পৌঁছানো। প্রচলিতভাবে “ঈসালে সওয়াব” বলা হয়, মৃত ব্যক্তির জন্য দুনিয়ায় কোন আমল করে সওয়াব পৌঁছানোকে ।

এভাবে সওয়াব পৌঁছানো সম্পর্কে কুরআন কী বলে?

ﺍﻟْﻤَﺎﻝُ ﻭَﺍﻟْﺒَﻨُﻮﻥَ ﺯِﻳﻨَﺔُ ﺍﻟْﺤَﻴَﺎﺓِ ﺍﻟﺪُّﻧْﻴَﺎۖ ﻭَﺍﻟْﺒَﺎﻗِﻴَﺎﺕُ ﺍﻟﺼَّﺎﻟِﺤَﺎﺕُ ﺧَﻴْﺮٌ ﻋِﻨﺪَ ﺭَﺑِّﻚَ ﺛَﻮَﺍﺑًﺎ ﻭَﺧَﻴْﺮٌ ﺃَﻣَﻠًﺎ ‏[ ١٨ : ٤٦ ]

ধনৈশ্বর্য ও সন্তান-সন্ততি পার্থিব জীবনের সৌন্দর্য এবং স্থায়ী সৎকর্মসমূহ আপনার পালনকর্তার কাছে প্রতিদান প্রাপ্তি ও আশা লাভের জন্যে উত্তম। [সূরা কাহাফ-৪৬]

স্থায়ী সৎকাজ বলতে কুরআনে বর্ণিত বা হাদীসে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক অনুমোদিত যাবতীয় নেককাজই বুঝানো হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং সাহাবায়ে কিরামের বিভিন্ন উক্তির মাধ্যমে তা স্পষ্ট হয়েছে। উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহুর দাস হারেস বলেন, উসমান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু একদিন বসলে আমরা তার সাথে বসে পড়লাম। ইতিমধ্যে মুয়াজ্জিন আসল। তিনি পাত্রে করে পানি নিয়ে আসার নির্দেশ দিলেন। সে পানির পরিমাণ সম্ভবত এক মুদ (৮১৫.৩৯ গ্রাম মতান্তরে ৫৪৩ গ্রাম) পরিমান হবে। (দেখুন, মুজামুলুগাতিল ফুকাহা)। তারপর উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু সে পানি দ্বারা অজু করলেন এবং বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আমার এ অজুর মত অজু করতে দেখেছি। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যদি কেউ আমার অজুর মত অজু করে জোহরের সালাত আদায় করে তবে এ সালাত ও ভোরের মাঝের সময়ের গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। তারপর যদি আসরের সালাত আদায় করে তবে সে সালাত ও জোহরের সালাতের মধ্যকার গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। এরপর যদি মাগরিবের সালাত আদায় করে তবে সে সালাত ও আসরের সালাতের মধ্যে কৃত গুনাহসমূহ মাফ করে দেয়া হবে। । তারপর এশার সালাত আদায় করলে সে সালাত এবং মাগরিবের সালাতের মধ্যে হওয়া সমূদয় গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। এরপর সে হয়ত: রাতটি ঘুমিয়েই কাটিয়ে দিবে। তারপর যখন ঘুম থেকে জেগে অজু করে এবং সকালের সালাত আদায় করে তখন সে সালাত এবং এশার সালাতের মধ্যকার সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। আর এগুলোই হলো এমন সৎকাজ যেগুলো অপরাধ মিটিয়ে দেয়। লোকেরা এ হাদীস শোনার পর বলল, হে উসমান এগুলো হলো “হাসানাহ” বা নেক-কাজ। কিন্তু “আল-বাকিয়াতুস-সালেহাত কোনগুলো? তখন তিনি বললেন তা হলো, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ‘,”সুবহানাল্লাহ’, ‘আলহামদুলিল্লাহ’, ‘আল্লাহু আকবার’ এবং “লা হাওলা ওলা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’। [মুসনাদে আহমাদ: ১/৭১] “আল-বাকিয়াতুস-সালেহাত” এর তাফসীরে এ পাঁচটি বাক্য অন্যান্য অনেক সাহাবা, তাবেয়ী ও তাবে তাবেয়ীনদের থেকেও বর্ণিত হয়েছে। তবে ইবন আব্বাস থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেছেন: “আলবাকিয়াতুস-সালেহাত” দ্বারা আল্লাহর যাবতীয় যিকর বা স্মরণকে বুঝানো হয়েছে। সে মতে তিনি “তাবারাকাল্লাহ’, ‘আস্তাগফিরুল্লাহ’, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর সালাত পাঠ, সাওম, সালাত, হজ্জ, সাদাকাহ, দাসমুক্তি, জিহাদ, আত্মীয়তার সম্পর্ক সংরক্ষণ সহ যাবতীয় সৎকাজকেই এর অন্তর্ভুক্ত করেছেন এবং বলেছেন: এর দ্বারা ঐ সমৃদয় কাজই উদ্দেশ্য হবে যা জান্নাতবাসীদের জন্য যতদিন সেখানে আসমান ও যমীনের অস্তিত্ব থাকবে ততদিন বাকী থাকবে অর্থাৎ চিরস্থায়ী হবে; কারণ জান্নাতের আসমান ও যমীন স্থায়ী ও অপরিবর্তনশীল। [ইবন কাসীর]

স্থায়ী সৎকর্ম কী? এক হাদীসে রাসূল সাঃ ব্যাখ্যা করেনঃ

ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻲ ﻫُﺮَﻳْﺮَﺓَ، ﺃَﻥَّ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲَّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻗَﺎﻝَ : ” ﺇِﺫَﺍ ﻣَﺎﺕَ ﺍﻟْﺈِﻧْﺴَﺎﻥُ ﺍﻧْﻘَﻄَﻊَ ﻋَﻨْﻪُ ﻋَﻤَﻠُﻪُ ﺇِﻟَّﺎ ﻣِﻦْ ﺛَﻠَﺎﺙٍ : ﺇِﻟَّﺎ ﻣِﻦْ
ﺻَﺪَﻗَﺔٍ ﺟَﺎﺭِﻳَﺔٍ، ﺃَﻭْ ﻋِﻠْﻢٍ ﻳُﻨْﺘَﻔَﻊُ ﺑِﻪِ، ﺃَﻭْ ﻭَﻟَﺪٍ ﺻَﺎﻟِﺢٍ ﻳَﺪْﻋُﻮ ﻟَﻪُ

হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেন, ব্যক্তি যখন মারা যায়, তখন তার নেক আমল করার পথ রুদ্ধ হয়ে যায়। তবে তিনটি পথ ছাড়া। একটি হল, সদকায়ে জারিয়া, দ্বিতীয় হল ইলম, যদ্বারা মানুষ উপকার পায়, এবং তৃতীয় হল, নেক সন্তানের দুআ। [মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-৮৮৪৪, সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-২৮৮০, মুসলিম, হাদীস নং-১৬৩১]

ঈসালে সওয়াব নিয়ে হাদীসে রাসূল সাঃ দেখি ৷

ﻋَﻦْ ﻋَﺎﺋِﺸَﺔَ ﺭَﺿِﻲَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻨْﻬَﺎ : ﺃَﻥَّ ﺭَﺟُﻠًﺎ ﻗَﺎﻝَ ﻟِﻠﻨَّﺒِﻲِّ ﺻَﻠَّى ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ : ﺇِﻥَّ ﺃُﻣِّﻲ ﺍﻓْﺘُﻠِﺘَﺖْ ﻧَﻔْﺴُﻬَﺎ، ﻭَﺃَﻇُﻨُّﻬَﺎ ﻟَﻮْ ﺗَﻜَﻠَّﻤَﺖْ ﺗَﺼَﺪَّﻗَﺖْ، ﻓَﻬَﻞْ ﻟَﻬَﺎ ﺃَﺟْﺮٌ ﺇِﻥْ ﺗَﺼَﺪَّﻗْﺖُ ﻋَﻨْﻬَﺎ؟ ﻗَﺎﻝَ : ‏« ﻧَﻌَﻢْ হ

হযরত আয়শা রাঃ থেকে বর্ণিত। এক ব্যক্তি রাসূল সাঃ এর কাছে এসে বলল, আমার আম্মা হঠাৎ ইন্তেকাল করেছেন। কিছু বলে যেতে পারেননি ৷ আমার ধারণা! তিনি যদি কিছু বলার সুযোগ পেতেন, তাহলে আমাকে তার নামে সদকা করতে বলতেন। তো আমি যদি তার নামে সদকা করি, তাহলে কি এর সওয়াব তিনি পাবেন? রাসূল সাঃ বললেন, হ্যাঁ।
[বুখারী, হাদীস নং-১৩৮৮]

২ ﻋَﻦِ ﺍﺑْﻦِ ﻋَﺒَّﺎﺱٍ ﺭَﺿِﻲَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻨْﻬُﻤَﺎ، ﺃَﻥَّ ﺍﻣْﺮَﺃَﺓً ﻣِﻦْ ﺟُﻬَﻴْﻨَﺔ،َ ﺟَﺎﺀَﺕْ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲِّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ، ﻓَﻘَﺎﻟَﺖْ : ﺇِﻥَّ ﺃُﻣِّﻲ ﻧَﺬَﺭَﺕْ ﺃَﻥْ ﺗَﺤُﺞَّ ﻓَﻠَﻢْ ﺗَﺤُﺞَّ ﺣَﺘَّﻰ ﻣَﺎﺗَﺖْ، ﺃَﻓَﺄَﺣُﺞُّ ﻋَﻨْﻬَﺎ؟ ﻗَﺎﻝَ : ‏« ﻧَﻌَﻢْ ﺣُﺠِّﻲ ﻋَﻨْﻬَﺎ، ﺃَﺭَﺃَﻳْﺖِ ﻟَﻮْ ﻛَﺎﻥَ ﻋَﻠَﻰ ﺃُﻣِّﻚِ ﺩَﻳْﻦٌ ﺃَﻛُﻨْﺖِ ﻗَﺎﺿِﻴَﺔً؟ ﺍﻗْﻀُﻮﺍ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻓَﺎﻟﻠَّﻪُ ﺃَﺣَﻖُّ ﺑِﺎﻟﻮَﻓَﺎﺀِ

হযরত ইবনে আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত। জুহাইনা এলাকার এক মহিলা রাসূল সাঃ এর কাছে এসে বললেন, আমার আম্মা হজ্ব করার মান্নত করেছিলেন, কিন্তু হজ্ব করার আগেই তিনি ইন্তেকাল করেছেন। আমি কি এখন তার পক্ষ থেকে তা আদায় করবো? রাসূল সাঃ ইরশাদ করলেন, হ্যাঁ, তুমি তার পক্ষ থেকে আদায় কর। তোমার মায়ের যিম্মায় যদি ঋণ থাকতো, তাহলে কি তুমি তা আদায় করতে না? তেমনি এটাও আদায় কর। কারণ আল্লাহ তাআলাই অধিক হক রাখেন যে, তার সাথে কৃত অঙ্গিকার পূর্ণ করা হবে। [বুখারী, হাদীস নং-১৮৫২]।

৩ ﻋَﻦْ ﺟَﺎﺑِﺮٍ، ﻗَﺎﻝَ : ﺗُﻮُﻓِّﻲَ ﺭَﺟُﻞٌ ﻓَﻐَﺴَّﻠْﻨَﺎﻩُ، ﻭَﺣَﻨَّﻄْﻨَﺎﻩُ، ﻭَﻛَﻔَّﻨَّﺎﻩُ، ﺛُﻢَّ ﺃَﺗَﻴْﻨَﺎ ﺑِﻪِ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻳُﺼَﻠِّﻲ ﻋَﻠَﻴْﻪِ، ﻓَﻘُﻠْﻨَﺎ : ﺗُﺼَﻠِّﻲ ﻋَﻠَﻴْﻪِ؟ ﻓَﺨَﻄَﺎ ﺧُﻄًﻰ، ﺛُﻢَّ ﻗَﺎﻝَ : ” ﺃَﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺩَﻳْﻦٌ؟ ” ﻗُﻠْﻨَﺎ : ﺩِﻳﻨَﺎﺭَﺍﻥِ، ﻓَﺎﻧْﺼَﺮَﻑَ، ﻓَﺘَﺤَﻤَّﻠَﻬُﻤَﺎ ﺃَﺑُﻮ ﻗَﺘَﺎﺩَﺓَ، ﻓَﺄَﺗَﻴْﻨَﺎﻩُ، ﻓَﻘَﺎﻝَ ﺃَﺑُﻮ ﻗَﺘَﺎﺩَﺓَ : ﺍﻟﺪِّﻳﻨَﺎﺭَﺍﻥِ ﻋَﻠَﻲَّ، ﻓَﻘَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ : ” ﺣَﻖُّ ﺍﻟْﻐَﺮِﻳﻢُ، ﻭَﺑَﺮِﺉَ ﻣِﻨْﻬُﻤَﺎ ﺍﻟْﻤَﻴِّﺖُ؟ ” ﻗَﺎﻝَ : ﻧَﻌَﻢْ، ﻓَﺼَﻠَّﻰ ﻋَﻠَﻴْﻪِ، ﺛُﻢَّ ﻗَﺎﻝَ ﺑَﻌْﺪَ ﺫَﻟِﻚَ ﺑِﻴَﻮْﻡٍ : ” ﻣَﺎ ﻓَﻌَﻞَ ﺍﻟﺪِّﻳﻨَﺎﺭَﺍﻥِ؟ “ ﻓَﻘَﺎﻝَ : ﺇِﻧَّﻤَﺎ ﻣَﺎﺕَ ﺃَﻣْﺲِ، ﻗَﺎﻝَ : ﻓَﻌَﺎﺩَ ﺇِﻟَﻴْﻪِ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﻐَﺪِ، ﻓَﻘَﺎﻝَ : ﻟَﻘَﺪْ ﻗَﻀَﻴْﺘُﻬُﻤَﺎ، ﻓَﻘَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ : ” ﺍﻟْﺂﻥَ ﺑَﺮَﺩَﺕْ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺟِﻠْﺪُﻩُ “،

হযরত জাবের রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি মারা গেলে আমরা তার গোসল দিলাম। তারপর কাফন পড়িয়ে রাসূল সাঃ এর কাছে নিয়ে এলাম। যেন তিনি তার উপর জানাযা পড়েন। আমরা হযরতকে জানাযা পড়াতে অনুরোধ করলাম। নবীজী সাঃ কয়েক কদম আগে বাড়লেন। তারপর তিনি বললেন, তার উপর কি কোন ঋণ আছে? আমরা বললাম, দুই দিনার ঋণ আছে। একথা শুনে রাসূল সাঃ ফিরে গেলেন। তখন আবু কাতাদা রাঃ বললেন, আমি তা পরিশোধ করে দিব। ঋণের হক আদায় করে তুমি মৃতকে ঋণমুক্ত করবে? তিনি বললেন, হ্যাঁ, তারপর রাসূল সাঃ তার জানাযা পড়ালেন। তারপর একদিন পর রাসূল সাঃ জিজ্ঞাসা করলেন, ঋণ কি আদায় হয়েছে? আবু কাতাদা বললেন, তিনিতো গতকাল মারা গেছেন। তারপর একদিন পর আবার জিজ্ঞাসা করলেন। তখন জবাবে বলা হল, আদায় করা হয়েছে। তখন রাসূল সাঃ ইরশাদ করলেন, এখন উক্ত ব্যক্তির আত্মাকে শান্ত করেছো। [মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৪৫৩৬]

৪ ﻋَﻦْ ﺟَﺎﺑِﺮِ ﺑْﻦِ ﻋَﺒْﺪِ ﺍﻟﻠَّﻪِ، ﻗَﺎﻝَ : ﺷَﻬِﺪْﺕُ ﻣَﻊَ ﺭَﺳُﻮﻝِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺍﻟْﺄَﺿْﺤَﻰ ﺑِﺎﻟْﻤُﺼَﻠَّﻰ، ﻓَﻠَﻤَّﺎ ﻗَﻀَﻰ ﺧُﻄْﺒَﺘَﻪُ ﻧَﺰَﻝَ ﻣِﻦْ ﻣِﻨْﺒَﺮِﻩِ ﻭﺃُﺗِﻲَ ﺑِﻜَﺒْﺶٍ ﻓَﺬَﺑَﺤَﻪُ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺑِﻴَﺪِﻩِ، ﻭَﻗَﺎﻝَ : ‏« ﺑِﺴْﻢِ ﺍﻟﻠَّﻪِ، ﻭَﺍﻟﻠَّﻪُ ﺃَﻛْﺒَﺮُ، ﻫَﺬَﺍ ﻋَﻨِّﻲ، ﻭَﻋَﻤَّﻦْ ﻟَﻢْ ﻳُﻀَﺢِّ ﻣِﻦْ ﺃُﻣَّﺘِﻲ

হযরত জাবের বিন আব্দুল্লাহ রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূল সাঃ এর সাথে ঈদুল আযহায় নামাযে শরীক ছিলাম। যখন খুতবা শেষ হল। তখন তিনি মিম্বর থেকে নামলেন। তারপর তার কাছে একটি ভেড়া আনা হল। তারপর তিনি তা জবাই করলে নিজ হাতে। জবাইকালে বললেন, বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার, এটি আমার এবং আমার ঐ উম্মতীর পক্ষ থেকে যারা কুরবানী করতে পারেনি। [আবু দাউদ, হাদীস নং-২৮১০]

৫ ﻋَﺒْﺪُ ﺍﻟﺮَّﺣْﻤَﻦِ ﺑْﻦُ ﺍﻟْﻌَﻠَﺎﺀِ ﺑْﻦِ ﺍﻟﻠَّﺠْﻠَﺎﺝِ، ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻴﻪِ، ﻗَﺎﻝَ : ﻗَﺎﻝَ ﻟِﻲ ﺃَﺑِﻲ : ” ﻳَﺎ ﺑُﻨَﻲَّ ﺇِﺫَﺍ ﺃَﻧَﺎ ﻣُﺖُّ ﻓَﺄَﻟْﺤِﺪْﻧِﻲ، ﻓَﺈِﺫَﺍ ﻭَﺿَﻌْﺘَﻨِﻲ ﻓِﻲ ﻟَﺤْﺪِﻱ ﻓَﻘُﻞْ : ﺑِﺴْﻢِ ﺍﻟﻠﻪِ ﻭَﻋَﻠَﻰ ﻣِﻠَّﺔِ ﺭَﺳُﻮﻝِ ﺍﻟﻠﻪِ، ﺛُﻢَّ ﺳِﻦَّ ﻋَﻠَﻲَّ ﺍﻟﺜَّﺮَﻯ ﺳِﻨًّﺎ، ﺛُﻢَّ ﺍﻗْﺮَﺃْ ﻋِﻨْﺪَ ﺭَﺃْﺳِﻲ ﺑِﻔَﺎﺗِﺤَﺔِ ﺍﻟْﺒَﻘَﺮَﺓِ ﻭَﺧَﺎﺗِﻤَﺘِﻬَﺎ، ﻓَﺈِﻧِّﻲ ﺳَﻤِﻌْﺖُ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻳَﻘُﻮﻝُ ﺫَﻟِﻚَ

হযরত আব্দুর রহমান বিন আলা বিন লাজলাজ, তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে, আমার পিতা আমাকে বলেছেন, হে বৎস! আমি যখন মারা যাবো, তখন আমার জন্য “লাহাদ” কবর খুড়বে। তারপর আমাকে যখন কবরে রাখবে তখন পড়বে “বিসমিল্লাহি ওয়াআলা মিল্লাতি রাসূলিল্লাহ” তারপর আমার উপর মাটি ঢালবে। তারপর আমার মাথার পাশে সূরা বাকারার শুরু এবং শেষাংশ পড়বে। কেননা, আমি রাসূল সাঃ থেকে এমনটি বলতে শুনেছি। [আলমুজামুল কাবীর লিততাবরানী, হাদীস নং-৪৫১, সুনানুল কুবরা লিলবায়হাকী, হাদীস নং-৭০৬৮]।

ইজমা

ﻭﺍﻟﻤﻌﺘﻤﺪ ﻓﻰ ﺍﻟﻤﺬﺍﻫﺐ ﺍﻻﺭﺑﻌﺔ ﺍﻥ ﺛﻮﺍﺏ ﺍﻟﻘﺮﺍﺀﺓ ﻳﺼﻞ ﺍﻟﻰ ﺍﻻﻣﻮﺍﺕ، ﻻﻧﻪ ﻫﺒﺔ ﻭﺩﻋﺎﺀ ﺑﺎﻟﻘﺮﺁﻥ ﺍﻟﺬﻯ ﺗﺘﻨﺰﻝ ﺍﻟﺮﺣﻤﺎﺕ ﻋﻨﺪ ﺗﻼﻭﺗﻪ، ﻭﻗﺪ ﺛﺒﺖ ﻓﻰ ﺍﻟﺴﻨﺔ ﺍﻟﻨﺒﻮﻳﺔ ﻭﺻﻮﻝ ﺍﻟﺪﻋﺎﺀ ﻭﺍﻟﺼﺪﻗﺔ ﻟﻠﻤﻴﺖ، ﻭﺫﻟﻚ ﻣﺠﻤﻊ ﻋﻠﻴﻪ

চার ইমামগণের নিকট যে কথাটি গ্রহণযোগ্য, তা হল, কুরআনে কারীমের তিলাওয়াতের সওয়াবও মৃতের কাছে পৌঁছে। কেননা, এটি কুরআনে কারীমের হাদিয়া এবং দুআ। যা তিলাওয়াতকালে আল্লাহর পক্ষ থেকে নাজিল হয়। যেহেতু মাইয়্যেতের জন্য সদকা এবং তার জন্য দুআ করলে তা মৃতের কাছে পৌঁছার বিষয়টি হাদীসে নববী দ্বারা প্রমাণিত। এর উপরই উম্মতের ইজমা। [তাফসীরে মুনীর-১৪/১৪০, ডঃ ওহাবাতুজ জুহাইলী]

একটি প্রশ্ন এবং তার সঠিক জবাব ৷

কুরআনে কারীমে ইরশাদ হয়েছে
ﻭَﺃَﻥ ﻟَّﻴْﺲَ ﻟِﻠْﺈِﻧﺴَﺎﻥِ ﺇِﻟَّﺎ ﻣَﺎ ﺳَﻌَﻰٰ ‏[ ٥٣ :٣٩ ]
এবং মানুষ তাই পায়,যা সে করে,[সূরা নজম-৩৯] এ আয়াত দ্বারা বুঝা যাচ্ছে যে, ব্যক্তি যা করে কেবল এর সওয়াবই সে পাবে। একজনের সওয়াবের কাজ অন্যের জন্য কোন কাজে আসবে না। তাই ঈসালে সওয়াব দ্বারা মৃত ব্যক্তি কোন ফায়দা পাবে না।

উত্তর আয়াত বুঝতে হবে সালাফের বুঝ অনুপাতে। উক্ত আয়াতের দ্বারা উদ্দেশ্য কারা? আল্লামা কুরতুবী রহঃ তাফসীরে কুরতুবীতে লিখেনঃ

ﻭَﻗَﺎﻝَ ﺍﻟﺮَّﺑِﻴﻊُ ﺑْﻦُ ﺃَﻧَﺲٍ : ‏( ﻭَﺃَﻥْ ﻟَﻴْﺲَ ﻟِﻠْﺈِﻧْﺴﺎﻥِ ﺇِﻟَّﺎ ﻣَﺎ ﺳَﻌﻰ ‏) ﻳَﻌْﻨِﻲ ﺍﻟْﻜَﺎﻓِﺮَ ﻭَﺃَﻣَّﺎ ﺍﻟْﻤُﺆْﻣِﻦُ ﻓَﻠَﻪُ ﻣَﺎ ﺳَﻌَﻰ ﻭَﻣَﺎ ﺳَﻌَﻰ ﻟَﻪُ ﻏَﻴْﺮُﻩُ . ﻗُﻠْﺖُ : ﻭَﻛَﺜِﻴﺮٌ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﺄَﺣَﺎﺩِﻳﺚِ ﻳَﺪُﻝُّ ﻋَﻠَﻰ ﻫَﺬَﺍ ﺍﻟْﻘَﻮْﻝِ، ﻭَﺃَﻥَّ ﺍﻟﻤﺆﻣﻦ ﻳﺼﻞ ﺇﻟﻴﻪ ﺛَﻮَﺍﺏِ ﺍﻟْﻌَﻤَﻞِ ﺍﻟﺼَّﺎﻟِﺢِ ﻣِﻦْ ﻏَﻴْﺮِﻩِ

، রবী’ বিন আনাস বলেন, “এবং মানুষ তাই পায়,যা সে করে” কথার দ্বারা উদ্দেশ্য হল কাফের। অর্থাৎ কাফেররা যা করে শুধু এতটুকুই সে পাবে। কিন্তু মুমিনরা সে যা করে তার সওয়াবও পায়, আবার অন্যের কৃত সওয়াব ও পায়। আমি [ইমাম কুরতুবী] বলি, অনেক হাদীস এ বিষয়টির প্রমাণ বহন করে। নিশ্চয় মুমিনের জন্য অন্যের কৃত নেক আমলের সওয়াবও পৌঁছে। [তাফসীরে কুরতুবী-১৭/১১৪]

উপরোক্ত দলীল প্রমাণাদীর মাধ্যমে আশা করি বিষয়টি পরিস্কার হয়ে গেছে যে, মৃতের জন্য ঈসালে সওয়াব করা কুরআন ও হাদীস এবং ইজমায়ে উম্মাহ দ্বারা প্রমাণিত। তাই ঈসালে সওয়াবের উদ্দেশ্যে যেসব কাজ করা যায়ঃ

১ ৷ মৃতের নামে সদকা করা।
২ ৷ কুরবানী করা।
৩ ৷ মৃতের জন্য কুরআন তিলাওয়াত করা।
৪ ৷ মৃতের জন্য দুআ করা।
৫ ৷ ইস্তিগফার করা।
৬ ৷ হজ্ব করা।
ইত্যাদি পূণ্যের কাজ করে মৃত ব্যক্তির জন্য ঈসালে সওয়াব করা যায়। যা কুরআন ও হাদীসের মাধ্যমে সুষ্পষ্টরূপে প্রমাণিত। এটি অস্বীকার করা মানেই হল, মূলত কুরআন ও হাদীসকেই অস্বীকার করা। আল্লাহ তাআলা আমাদের মৃত্যুর পরও এমন ঈসালে সওয়াব যেন কবরে থেকে পাই সেই তৌফিক আমাদের দান করুন। আমীন।

  • লেখকঃ
    দীদার মাহদী
    ভাইস প্রিন্সিপ্যাল
    দারুলহুদা মডেল মাদরাসা
    কোদালপুর, গোসাইরহাট, শরীয়তপুর ৷

Leave a Comment